জনগনের সাথে অভিনব প্রতারনা: সর্বশান্ত হয় মধ্যবিত্তরা
বাগেরহাট : কে না চায় বড়লোক হতে, আর খুব দ্রুত বড়লোক হতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া পরিবারের অনেকেই। আর মধ্যবিত্ত মানুষের বড়লোক হওয়ার স্বপ্নকে কাজে লাগিয়ে এক ধরণের প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রতারকদের পাতানো ফাদে পা দিচ্ছে বেশির ভাগ খেটে খাওয়া মধ্যবিত্ত মানুষ।
যারা নিজেদের সর্বোচ্চ বিক্রি করে
প্রতারকদের আর্থিক চাহিদা মেটাচ্ছে কিন্তু বিনিময়ে তারা শুধু অর্থ পাওয়ার
বা বড়লোক হওয়ার স্বপ্নই দেখছে আসলে কিছুই পাচ্ছে না।
প্রতারক চক্রের মূল হাতিয়ার হচ্ছে, সীমানা পিলার, পুরোনো রম্নপার
মুদ্রা, তামার মুদ্রা, সিংহ মার্কা মুদ্রা, পুরোনো দলীল, কষ্টি পাথরের
মুর্তি, কাচের পুরম্ন বোতল, বোন আলুর মুথা, কালো বিড়াল আর এর সাথে নতুন যোগ
হয়েছে তড়্গক(কাকা)। মূলত এসবকে ভিত্তি করেই লোভ দেখানো হচ্ছে সাধারণ
মানুষকে, আর উল্লেখিত জন্তু ও বস্তু গুলোকে বোঝানো হচ্ছে মহামূল্যবান
হিসেবে,
যেমন বলা হচ্ছে একটি সীমানা পিলারের দাম ৫-৫০কোটি টাকা, একটি পুরোনো
তামা ও রূপার মুদ্রার দাম ৫-১০লাখ টাকা, একটি সিংহ মার্কা পয়সার দাম
২.৫-৭লাখ টাকা, পুরোনো দলীলের দাম ১-১০ লক্ষ টাকা, একটি কাচের পুরু বোতলের
দাম ৩-৮ লক্ষ টাকা, কষ্টি পাথরের মুর্তি ১০-১০০ কোটি টাকা, বোন আলুর বড়
মুথার দাম ১০-১৫ লক্ষ টাকা, একটি কালো বিড়ালের দাম অর্ধ কোটি টাকা আর নতুন
স্থান পাওয়া একটি তক্ষক(কাকা) এর দাম (১০০-৫০০০) কোটি টাকা এসব পন্য,
বস্তু বা প্রাণীর এত দাম শোনার পরে কোন সাধারন মানুষ ঠিক থাকতে পারেনা।
আর এসব লোভ দেখিয়ে একটি সংগঠিত প্রতারক দল বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
প্রতারক দল গুলো খুবই সংগঠিত ভাবে কাজ কলে। জেলা পর্যায়ে এ দলের সদস্য
সংখ্যা থাকে ১০-২০জন। প্রথমে এদের দলের যে কাউকে দিয়ে সহজ-সরল মদ্যবিত্ত
একাধিক মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করায় এবং আস্তেআস্তে তাদের সাথে সম্পর্ক
গভীর থেকে গভীরতর হয় এবং এক সময় বলে আমার কাছে মহামূল্যবান সীমানা পিলার,
পুরোনো রুপার মুদ্রা, তামার মুদ্রা———–আছে, আমি ভাবছি কিছু দিব তাতেই
তোমার ১৪পুরুষ বসে জীবন কাটাতে পারবে ইত্যাদি। এভাবে কিছু দিন যাওয়ার পরে
তার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা ধার চায় প্রতারক এবং পরিচয়
করিয়ে দেয় দলে আরও কিছু সদস্যদের সাথে। আর এক এক করে ঐ তার্গেটকৃত ব্যক্তি
সবৃশান্ত না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে টাকা নেওয়ার খেলা। আর যখন সে টাকা টাকা
দিতে দিতে সর্ব শানত্ম হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে তখন আর
প্রতারকদের খুজে পাওয়া যায় না। এভাবেই চলে তাদের প্রতারণার ব্যবসা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাটের কচুয়ার জনৈক ভ্যান ড্রাইভার বললেন,
“ভাই পিলারের পিছনে হাটতে গিয়ে বাপের ৮বিঘা(৫একর) সম্পত্তি ধ্বংস করেছি
এখন বৌ-পোলা পান নিয়ে ভ্যান চালাইয়া খাই” কিভাবে টাকা খেয়ালেন এমন প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, আমার দু:সম্পর্কেও আত্মীয় মোশারেফ হাজী সাহেব নামে এক
ভদ্রলোক প্রথমে আমার কাছে আসে এবং আমার বাড়ী বাজার করে নিয়ে আসা, আমার
বাচ্চামের খাবার কিনে দেওয়াসহ আমাকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে এবং এক
পর্যায়ে আমাকে তার কাছে একটি মহামূল্যবান পিলার আছে বলে জানায়, তার কিছুদিন
পরে পিলার বিক্রি করে আমাকে অর্ধেক দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।
তারপর থেকেই পিলার সংরক্ষন, পিলার ক্রয়ের
পার্টি খোজাসহ বিভিন্ন অজুহাতে ২.৫বছরে(২০০৯-২০১১) আমার কাছ থেকে প্রায়
১০লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। আমি পিলার বিক্রি করা কোটি কোটি টাকা পাওয়ার নেশায়
অন্ধ ছিলাম তাই সে যখন যা বলছে তাই দিয়েছি।
এক পর্যায়ে যখন বুঝতে পারলাম যে, আমি কোন
দিনই পিলার পাব না তখন আমি তাকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলাম কিন্তু তিনি
আমাকে পুলিশের ভয় দেখাল। এর কিছুদিন পরে ২০১১ সালের শেষের দিকে তিনি এলাকা
থেকে নিখোজ হলে এবং এখনও বাড়ীতে আসে নাই শুনছি ইন্ডিয়া থাকে।
এছাড়াও বাগেরহাট জেলার বিভন্ন উপজেলায় খেঅজ নিলে শতাধিক ব্যক্তি পাওয়া
যাবে যারা প্রতারনার শিকার হয়েছেন। নয় উপজেলার সবচেচয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
লোক পাওয়া যাবে ফকিরহাটে। কিন্তু বিষয় হচ্ছে কোন ব্যক্তি এ বিষয়ে প্রতারিত
হলেও শিকার করতে রাজি হয় না।
তবে প্রতারিত লোকজন এসব প্রতারকদের শাস্তি চায়।
Source: http://www.unitednews24.com
রিপোর্ট »মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বার , ২০১২