Monday, May 31, 2010

ডিএমপি-প্রথম আলোর উদ্যোগ: সচেতনতায় জীবনের নিরাপত্তা

ডিএমপি-প্রথম আলোর উদ্যোগ:

সচেতনতায় জীবনের নিরাপত্তা

 

জীবন একটাই, মৃত্যুতে শেষ। একজন চালকের অসতর্কতায় প্রাণ যেতে পারে অনেকের। পথচারী তার অসচেতনতায় হারাতে পারে জীবন। তাই নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজেকেই সচেষ্ট হতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে যানবাহন চালানো ও রাস্তা পারাপার এবং পথচারীদের যথাসম্ভব ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার—এগুলো জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে।
এটা কারও বক্তৃতা নয়। গতকাল রোববার বাংলামোটর এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও প্রথম আলোর বন্ধুসভার সদস্যরা এভাবেই পথচারী ও যানবাহনের চালকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। উদ্দেশ্য, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও পথচারীদের সচেতন করা। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের অংশ হতে এসেছিলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও ইমন, সংগীতশিল্পী মেহরীন। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তাঁরা প্রত্যেকেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার না হয়ে পথচারীদের ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেন। ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারকারী পথচারীদের প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও স্মারক উপহার হিসেবে একটি চাবির ছড়া দেওয়া হয়।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত চলে এই কার্যক্রম। প্রথম আলো ও ঢাকা মহানগর পুলিশ যৌথভাবে এই প্রচারণার আয়োজন করে। গত বছরের ৪ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
সচেতনতামূলক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইস্কাটনের নুরুজ্জামান বলেন, ‘এখন থেকে আমি ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করব।’ তবে তিনি বলেন, পুলিশকেও একটু কঠোর হতে হবে। কেননা প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার সময় কাউকে রাস্তা দিয়ে পার হতে দেওয়া হয় না। সে সময় সবকিছু সুশৃঙ্খল থাকে। এটা সব সময় করতে হবে।
আইনজীবী জান্নাতুল আকতার বলেন, তিনি সব সময়ই ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করেন। তবে নিরিবিলি সময় একটু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এটা কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে। শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি অন্যকেও এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন।
ব্যতিক্রমী এই প্রচারণার শুরুতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক বলেন, মারধর করে কাউকে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করানো সম্ভব নয়। নিজের স্বার্থে প্রত্যেককে আইন মেনে চলা উচিত। পুলিশ চালকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। পথচারীদেরও সচেতন করার কাজ অব্যাহত থাকবে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘জীবনটা আমার, আমাকেই সচেতন হতে হবে। অনেক ফুটওভারব্রিজে সমস্যা আছে, এটা ঠিক। তবে এর জন্য ফুটওভারব্রিজ এড়িয়ে চলা খুবই বিপজ্জনক।’
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘গত বছর প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমাদের এই জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম ভবিষ্যতেও চলবে।’
শিল্পী মেহরীন বলেন, ফুটওভারব্রিজগুলো আকর্ষণীয় ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে মানুষ এগুলো ব্যবহার করতে আগ্রহ পাবে। একই সঙ্গে ফুটওভারব্রিজ পার হয়ে ফুটপাত ধরে নিরবচ্ছিন্ন হাঁটারও ব্যবস্থা থাকতে হবে, নয়তো মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
মডেল-অভিনেতা ইমন বলেন, সবাই জানেন, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তার পরও তাড়াহুড়ো করে অনেকেই ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে হাঁটেন। এই উদ্যোগের ফলে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
সচেতনতামূলক এই কার্যক্রমে বন্ধুসভার সদস্যরা বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্লাকার্ড বহন করেন। পুলিশও হ্যান্ডমাইকে সচেতনতামূলক বিভিন্ন স্লোগান প্রচার করে। এতে বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্যরাও যুক্ত ছিল।
পথচারীদের রাস্তা পারাপারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাস্তার পাশেই ‘অদৃশ্য নাট্যায়ন’-এর মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার চালায় ‘বটতলা’। তাদের উদ্যোগ প্রশংসা পায় পথচারীদের।

Source: http://www.prothom-alo.com